যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন………

প্রথম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫ সময়ঃ ৫:০৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:১৭ অপরাহ্ণ

রকিব কামাল

c u 2

 

এমন একটা সময় হলে এসছিলাম,যখন কোন ছোট ভাই পাইনি।অনেকটা একা কেটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবনের প্রথম তিন বছর। এমন একটি ছোট ভাই পাইনি যার সাথে বসে এক কাপ চা খাব। আর আজ বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছি সেই ছোট ভাইদের কাছ থেকে।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বিদায়ের শেষ মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগজড়িত কন্ঠে এইভাবে বলেছিলেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী মসিউর রহমান।নিজে কেঁদে,ছোটভাইদের কাঁদিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা পরিবার থেকে বিদায় নিল ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট আর মর্যদা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।এই বিভাগটির করিডোর দিয়ে হেটে যাওয়ার উপলব্দিতে যখন প্রিয় শিক্ষকদের মর্মবানি,দূরকে জয় অদম্য স্পৃহা,শত পাওয়ার সেতুবন্ধন।আবুল ভাই আর ফারুক ভাইদের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় কুশল বিনিময় করার চিরচেনা রূপ।

প্রিয় বন্ধু,সহপাঠি,শিক্ষক জুনিয়রদের আলিন্দরের মিলনমেলায় কাটানো সুখ দু:খের স্মৃতি যখন ফিরে আসে মনিকোঠায় তখন যেন বার বার প্রিয় বিভাগটির স্পর্শে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি বালুকোনা,ইট পাথরে গড়ে উঠা ভবন নিরবে নিভৃতে তাদের সাথে কেঁদে যায়।দীর্ঘ পাঁচ বছরের এই বিভাগটিকে যারা এতোটা আগলে জড়িয়ে রেখেছেন তারা আজ যেন বড় বেশি অচেনা।তারা আজ দীর্ঘ সময়ের কাটানো মুহূর্তকে ছেড়ে পাড়ি দিতে চাইছে অন্য কোথাও।

ছাত্রজীবনের শ্রেষ্ট সময় ধরে নিয়ে এই হলকে আপন ভেবে তারা দ্বিতীয় সংসার পেতেছিল।এই হলে জীবনের প্রথম এসে বাড়ির জন্য ছটফট করা ছেলেটিও এক সময় ভুলতে বসেছিল নিজ বাড়ির কথা।কত মত,যুক্তির খুনসুটিতে জড়িয়ে থাকা রাত তিনটা কি ভোর ছয়টায় আড্ডার তালের মিলনমেলায় যখন ক্লান্ত জীবনের খারাপ আর ভাললাগা একত্রে মিলিত হয়েছিল।অথচ আজ কতটা নিষ্টুরতার সাক্ষি হয়ে সেই হল তাদের বিদায়ে প্রস্তুত হয়েছে সাজ সাজ রবে।যে হলকে তারা এতটা আপন ভেবেছে,সেই কাছের মানুষগুলো আজ উৎসব মুখরতায় দিনের শুরু করেছিল প্রীতি ফুটবল দিয়ে।

বড় ভাইদের কাঁধে তুলে হৈ হুল্লোড়ে মাতিয়ে চৌব্বাচায় ফেলে,পানি ছিটিয়ে, নেচে গেয়ে জীবনের পাশ কাটিয়ে দিনটিকে স্মরণ করে রেখেছিল হাজারো দিনের অসমাপ্তিতে। এত সব আয়োজন এর মাঝে বার বার নিজেদের মাঝে অভিনয় করে যাওয়া বিদায়ী মুখগুলো যেন নিজেদের মধ্যকার আলিঙ্গনে মুখ লুকিয়ে বলে দিতে চাইছিল এমন একটি দিনের জন্য আমরা প্রস্তুত নই। কেউবা এই সময়ে ব্যস্ত ছিল শেষ বারের মত স্মৃতিটুকো ধরে রাখার শেষ চেষ্টায়।

সন্ধ্যায় একই ঢঙ্গে,পোশাকে,গলা চেরে বেহুলা গানে কম্পিত করে সেই চিরচেনা প্রিয় ক্যাম্পাস মাড়িয়ে বহুদিনের স্মৃতি বিজড়িত প্রীতিলতা,খালেদা জিয়া,শামসুন্নাহার হলের সামনে এসে মনে পড়ে যাচ্ছিল বহু আকাঙ্খা আর না বলা কথার আজই যেন শেষ সময়।

দীর্ঘ ছয় বছরের স্মৃতিময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের বিদায়ী মুহূর্তটি যখন উকি দিচ্ছিল শেষ দিগন্তে তাতে নতুন করে ঘি ঢেলে দেয় প্রিয় শিক্ষকদের সরব উপস্থিতি। শিক্ষকদের সেই চিরচেনা আবহে যেন শেষবারের বলতে চেয়েছিলেন জীবনের নতুন অধ্যায়কে আকড়ে ধরার সময়ের কথা।বলে দিতে ছেয়েছিলেন প্রতিটি মুহূর্তের সেতুবন্ধন এর কথা।এই বন্ধনের সমাপ্তি যেন রিক্তের বেদনায়,যা অনন্ত,অবিনশ্বর।

বিদায়ের শেষ বেলায় শিক্ষকদের এতো কাছ থেকে পেয়ে কেউ বলতে গিয়ে থেমে যাওয়া,কেউ আবেগে নিরব হয়ে অপলক তাকিয়ে থাকা,কেউ বলতে গিয়ে কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন, কেউ বলেছেন দীর্ঘ সময়ের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার কথা,কেউবা বলছিলেন প্রিয় বিভাগ এর শত পাওয়া আর না পাওয়ার কথা।

সারাদিন উৎসব,আড্ডা,দৌড়ঝাপ,ফুটবল খেলা,সাংস্কতিক অনুষ্ঠানের হাসির ফোয়ারায় মাতিয়ে রাখা শেষে রাতের ভোজন যেন নতুন মাত্রা যোগ করে।ভালবাসার অদীপ্ত প্রেরনাকে শেষ সীমান্তে বার বার স্মরণ করে দিয়ে বলে দিতে চেয়েছিলেন নতুনের জয়গানের কথা।

প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G